নিজস্ব প্রতিবেদক:
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এজন্য দলের দুটি মনোনয়ন ফরম ক্রয় করেছেন।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার একদিন পর আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে শেখ হাসিনার পক্ষে দুটি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আর এর মধ্য দিয়ে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে ৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি উদ্বোধন করা হয়। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম বিক্রি চলবে।
গোপালগঞ্জ-৩ (টুঙ্গীপাড়া-কোটালীপাড়া) আসনের জন্য শেখ হাসিনা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। আরেকটি আসন এখনো জানানো হয়নি। পরে জানানো হবে বলে ওবায়দুল কাদের জানান। ওবায়দুল কাদের গোপালগঞ্জ -৩ আসনের ফরমটি কিনে আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ আবদুল্লার কাছে হস্তান্তর করেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ-৩ আসনের পাশাপাশি তার শ্বশুরবাড়ির এলাকা রংপুরের পীরগঞ্জ (রংপুর-৬) আসনে নির্বাচন করে জয়ী হন। পরে তিনি রংপুর-৬ আসনটি ছেড়ে দিলে উপ-নির্বাচনে ওই আসনের এমপি হন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীর মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের পাশাপাশি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর জন্য রংপুর-৬ আসনের মনোনয়ন ফরম ক্রয় করেন এবং পরে তা ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাববী মিয়ার কাছে হস্তান্তর করেন।
আর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের জন্য নোয়াখালী-৫ আসনের একটি মনোনয়ন ফরম সংগগ্র করেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম। ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয় এবং পাশের নির্বাচন পরিচালনা অফিসে ফরম বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রচণ্ড আগ্রহ ও বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে আমাদের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হয়েছে। আগামী ১১ নভেম্বর রবিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভা হবে। কতদিন মনোনয়ন ফরম বিতরণ করা হবে সেটা সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, তফসিলের পর আন্দোলন তাদের (ঐক্যফ্রন্টের) অযৌক্তিক। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এখন দেশে উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, পাবলিক এখন ইলেকশন মুডে আছে। সবাই এখন ইলেকশন করতে চায়। নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশে এখন একটা উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। এর বাইরে যারা নির্বাচনবিরোধী তৎপরতায় যাবেন জনগণই তাদের প্রতিরোধ করবে।’
কাদের বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার পরপরেই আমরা মনোনয়ন ফরম বিতরণের কাজ শুরু করেছি। তফসিল ঘোষণার পর থেকে সারাদেশে নির্বাচনমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের বাইরে আন্দোলনের যত ডাকই দিক না কেন জনগণ তাতে সাড়া দেবে না।’
সর্বশেষ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট দুই হাজার ৬০৮ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছিল। এবার সেই সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন দলটির নেতারা। আওয়ামী লীগের ৪ হাজারেরও বেশি মনোনয়ন প্রত্যাশী এক বছর ধরে নানাভাবে নিজেদের প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। সেই হিসেবে গড়ে প্রতি আসনে ১৩ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। এবার মনোনয়ন ফরমের মূল্য ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করা হয়েছে। ফরম বিক্রি থেকে গতবার আওয়ামী লীগের তহবিলে জমা পড়েছিল প্র্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা। এবার তা দশ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে দলটির নেতাদের প্রত্যাশা।
আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা অফিসে মনোনয়ন ফরম বিক্রির জন্য খোলা হয়েছে আট বিভাগের আটটি বুথ। সারা দেশে থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা তাদের কর্মী-সমর্থক নিয়ে ধানমন্ডিতে ভিড় করায় বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই সেখানে চলছে উৎসবের আমেজ। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ধানমন্ডির ৩ নম্বর সড়ক ও আশপাশের এলাকা সরগরম করে রেখেছেন ঢাক-ঢোল ও গানবাজনায়। পছন্দের নেতাদের প্রার্থী করতে স্নোগানও দিচ্ছেন তারা। মনোনয়ন ফরম বিক্রি ঘিরে এই ভিড়ের কারণে সিটি কলেজ থেকে জিগাতলা মোড় পর্যন্ত রাস্তার একপাশে দেখা গিয়েছে ব্যাপক যানজট। ফলে ছুটির দিনের অনেকের পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ২৩ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়পত্র দাখিলের শেষ দিন ১৯ নভেম্বর। যাচাই-বাছাই ২২ নভেম্বর, প্রত্যাহার ২৯ নভেম্বর। ২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি এবার শেষ পর্যন্ত ভোটে আসবে ধরে নিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। টানা তৃতীয়বারের মতো জয়ের টার্গেট নিয়ে এগোচ্ছে দলটি। এজন্য নির্বাচনী কার্যক্রমও সবার আগে শুরু করেছে আওয়ামী লীগ।
ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপদপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য এস এম কামাল হোসেন, রেমন্ড আরেংসহ অন্যান্যরা।